Header Ads

Header ADS

‘GIS’- এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

GIS- এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

এখন আমরা জিআইএস এর ইতিহাস খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে জানার চেষ্টা করব। তবে শুরুতেই বলে রাখি, ইতিহাস বর্ণনা করা একটি কঠিন কাজ। কেননা বিভিন্ন প্রকাশিত বই/ প্রবন্ধ/ সংক্ষিপ্ত রচনা/ দলিল/ অনুচ্ছেদ/ গবেষণা নিবন্ধে জিআইএস এর ইতিহাসে কিছুটা পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়। তাই কিছু কিছু বিষয়ে অনেকেরই দ্বিমত থাকতে পারে। তবে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব, সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে।
খুবই প্রাথমিকভাবে জিআইএস বলতে আমরা মানচিত্রে তথ্য উপস্থাপন বুঝে থাকি। এই হিসাবে বলা যেতে পারে যে প্রায় ৩৫,০০০ হাজার বছর আগে GIS এর সূত্রপাত। কেননা ঐ সময়কার Cro-Magnon শিকারিরা তাদের গুহার ভিতরের দেয়ালে শিকার করা জীবজন্তুর প্রতিকৃতি, হিসাবরক্ষণের জন্য প্রতীক/ চিহ্ন (Tally), ওইসব জীবজন্তুর দৈনন্দিন চলাচল এবং দেশান্তরে গমন পথের (Migration Route) বিস্তারিত এঁকে রাখতেন। এতে করে তাদের শিকার করার সুবিধা হত। এই ধরণের ঐতিহাসিক লিপি/ চিত্রাঙ্কন থেকেই জিআইএস ধারণার উদ্ভব (ছবি-১) বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।
ছবি-১: প্রায় ৩৫,০০০ বছর (মতান্তরে ১৭,০০০ বছর) আগের শিকারিদের আঁকা জীবজন্তু এবং তাদের দেশান্তরে ভ্রমণ পথের গুহা চিত্রাঙ্কন। স্থানঃ Lascaux গুহা, ফ্রান্স।
পরবর্তীতে অনেকেই মানচিত্রের মাধ্যমে ভৌগলিক তথ্য প্রকাশ/ উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে ১৭৮১ সালে ফরাসি মানচিত্রকার Louis-Alexandre Berthier এর অঙ্কিত ইয়র্ক টাউন যুদ্ধের মানচিত্র অন্যতম (ছবি-২)।
এই হাতে আঁকা মানচিত্রের মাধ্যমে যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ, আমেরিকান এবং ফরাসি সৈন্যদলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হত।

ছবি-২: ১৭৮১ সালে ফরাসি মানচিত্রকার Louis-Alexandre Berthier এর অঙ্কিত ইয়র্ক টাউন যুদ্ধের মানচিত্র।
১৮৫৪ সালে লন্ডন শহরে কলেরা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরে। তখন জন স্নো নামক একজন ব্রিটিশ চিকিৎসক কলেরা আক্রান্ত এলাকার তথ্যচিত্র তুলে ধরেন হাতে আঁকা একটি মানচিত্রের মাধ্যমে (ছবি-৩)। বলা হয়ে থাকে, আধুনিক যুগের জিআইএস এর সূত্রপাত এইধরণের স্থানিক বিশ্লেষণী (Spatial Analysis) মানচিত্র থেকেই।

ছবি-৩: ১৮৫৪ সালে জন স্নো-এর আঁকা লন্ডনের আংশিক মানচিত্র। কলেরা আক্রান্ত এলাকাসমূহ গাঢ় কালো রঙে চিহ্নিত
এইভাবে বিভিন্ন সময়ে হাতে আঁকা মানচিত্র থেকে আধুনিক যন্ত্রগণক/ কম্পিউটার-ভিত্তিক জিআইএস-এর সূত্রপাত হয় ১৯৬০-এর দশকে উত্তর-আমেরিকায়। এইবার তাহলে কম্পিউটার-ভিত্তিক আধুনিক জিআইএস-এর ইতিহাস নিয়ে কিছু কথা বলা যাকঃ
·         ১৯৬৩ সালে Roger Tomlinson কানাডার সরকারের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন Canada Geographic Information System (CGIS)। সম্ভবত এটাই ছিল জিআইএস-এর প্রথম এবং প্রকৃত গবেষণাগার। এইখানে Tomlinson, অন্যান্য International Business Machines Corporation (IBM) কর্মকর্তাদের সাথে মিলিত হয়ে  ভূমি জরিপ এবং পরিসংখ্যানপত্র (Land Inventory) সংক্রান্ত অসংখ্য কম্পিউটার-সৃষ্ট মানচিত্র উদ্ভাবন/ প্রকাশ করেন। তিনি কম্পিউটারে মানচিত্র অঙ্কনের (Map Digitization) জন্য ড্রাম স্ক্যানার (Drum Scanner) তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জিআইএস এর প্রচার এবং প্রসারে অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অবদানের জন্য Roger Tomlinson-কে জিআইএস-এর জনক বা Father of GIS বলা হয়ে থাকে।
·         এরপর ১৯৬৫ সালে Howard Fisher হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে Harvard Laboratory for Computer Graphics (LCG) প্রতিষ্ঠা করেন। এইখানে উনি এবং কতিপয় কম্পিউটার বিজ্ঞানী মিলে বেশ কয়েকটি মানচিত্র প্রযুক্তির (Mapping Technology) সফ্টওয়্যার (SYMAP, CALFORM, SYMVU, GRID, POLYVRT and ODYSSEY) আমাদেরকে উপহার দেন। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে নানাবিধ কারণে এই কম্পিউটার গবেষণাগারটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে ইহা অনস্বীকার্য যে এই পরীক্ষাগার, জিআইএস-এর উন্নয়নের জন্য, ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এই উদ্যোগ জিআইএস এর প্রসারের ক্ষেত্রে সবার মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করে।
·         ১৯৬৬-৬৭ সালে David P. Bickmore, ইংল্যান্ডের Royal College of Art-এ মানচিত্র-নির্মানবিদ্যায় স্বয়ংক্রিয়তা (Automation of Cartography) আনার জন্য Experimental Cartography Unit (ECU) নামে একটি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও Bickmore পৃথিবীর প্রথম Free-Cursor Digitizer এবং মানচিত্র তৈরির জন্য উচ্চ স্পষ্টতা-সম্পন্ন Plotting Table উদ্ভাবন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ECU-এর মূল উদ্দেশ্য ছিল কম্পিউটারের সাহায্যে উচ্চ-গুণমানসম্পন্ন মুদ্রিত মানচিত্র উৎপাদন করা।
·         পরবর্তীতে আমেরিকা সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠান জিআইএস প্রয়োগ-বিষয়ক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পরিচালনা করে। যেমনঃ US Bureau of Census, United States Geological Survey (USGS), Central Intelligence Agency (CIA), US Forest Service, Fish and Wildlife Service, Department of Housing and Urban Development ইত্যাদি।
·         ১৯৬৯ সালে Jack এবং Laura Dangermond যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন Environmental Systems Research Institute (ESRI)। এই প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে হার্ভার্ড গবেষণাগারে প্রাপ্ত কৌশল ও ধারনার উপর ভিত্তি করে। শুরুতে ESRI একটি অ-লাভজনক ভূমি-ব্যবহার পরিকল্পনা (Land-Use Planning) ভিত্তিক পরামর্শক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসাবে কর্মকাণ্ড আরম্ভ করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা একটি বাণিজ্যিকভাবে সফল ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ESRI ১৯৮২ সালে ARC/INFO সফটওয়্যার দিয়ে প্রথমবারের মত জিআইএস ব্যবসায় প্রবেশ করে। এরপর ১৯৯১ সালে ArcView বাজারে আসে। ২০০৪ সালে ArcGIS ৯ মুক্তি পায়, যা ESRI-কে নিয়ে যায় ব্যবসায়িক সফলতার শিখরে। সর্বশেষ ২০১২ সালে ArcGIS ১০.১ মুক্তি পেয়েছে।
সবশেষে বলে রাখা ভাল, ১৯৮০র দশকের জিআইএস-এর বাস্তবিক প্রয়োগের এই উন্নয়নের ধারাকে আরও ত্বরান্বিত/বিস্তীর্ণ করেছে বাণিজ্যিকভাবে প্রাপ্য নিম্নলিখিত পণ্যসমূহঃ
·         Computer-Aided Design (CAD)
·         Database Management System (DBMS)
·         Remote Sensing
·         Global Positioning System (GPS) এবং
·         সহজলভ্য Digital তথ্য।

পরবর্তীতে ইন্টারনেট প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটলে জিআইএস-এর জগতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। যেমনঃ Web-GIS, Web Mapping, Google Earth, WikiMapia, OpenStreetMap, Google Maps, Participatory GIS, Google Map Maker, Volunteered Geographic Information (VGI) ইত্যাদি।

No comments

Theme images by Nikada. Powered by Blogger.