Header Ads

Header ADS

ভূগোল সম্পর্কে জানি (পর্ব-১)

ভূগোল সম্পর্কে জানি (পর্ব-১)
জাহিদুল ইসলাম
ভূগোল পরিবেশ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Geography শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ "ভূগোল" ।। আসলে Geography শব্দটি ভাংলে দাঁড়ায় Geo এবং Graphy ।।
Geo এর অর্থ "ভূ" বা পৃথিবী ।। আর Graphy অর্থ বর্ণনা করা ।। সে হিসেবে Geography শব্দের সঠিক বাংলা প্রতিশব্দ হলো "ভূবিদ্যা / ভূবিজ্ঞান" ।। কিন্তু ইংরেজি থেকে বাংলা করার সময় ভাষাবিদরা এর ভুল ব্যাখ্যা করে ফেলেন ।। তারপর থেকে ভুল অর্থাৎ "ভূগোল" শব্দটিই ব্যবহার হয়ে আসছে ।। তবে নিকট ভবিষ্যতে এই ভুল অর্থটি পরিত্যাগ করার পরিকল্পনা চলছে ।। সারা পৃথিবীতে ভূগোলের ইংরেজি প্রতিশব্দ "Geography" ব্যবহার করা হয় ।। ভুল বাংলা অর্থটি শুধুমাত্র "ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ত্রিপুরা রাজ্য এবং বাংলাদেশে " ব্যবহার করা হয় ।।
এটি এমন একটি বিজ্ঞান যেটা "সামাজিক বিজ্ঞান" "প্রাকৃতিক বিজ্ঞান" এর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ।। Geography এর জনক বলে অভিহিত করা হয় বিখ্যাত গ্রীক পণ্ডিত "ইরাটস থেনিস" কে ।। মূলত গ্রীক যুগ থেকেই Geography এর সূত্রপাত হয় ।।
কালক্রমে হাজার বছর ধরে চলমান এই শাখা বিকাশ লাভ করতে করতে আজকের Modern Geography তে পরিণত হয়েছে ।।
Modern Geography
তে পরিণত হতে ফ্রান্স; জার্মানি, ইংল্যান্ড , রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবদান অনস্বীকার্য ।। Geography পৃথিবীকে নিয়ে গবেষণা করে, আর জগতের যাবতীয় বিজ্ঞানের শাখা ধীরে ধীরে পৃথিবীরই নানান উপাদান ক্রিয়াকর্ম নিয়ে আলাদা আলাদা আলোচনা করে বিধায় Geography কে বিজ্ঞানের জননী বলে ।। পদার্থবিজ্ঞান পদার্থ নিয়ে আলোচনা করে, রসায়ন মৌল/ যৌগ নিয়ে আলোচনা করে, জীব বিজ্ঞান প্রানি উদ্ভিদ নিয়ে আলোচনা করে ।। কিন্তু সকল কিছুই শুধুমাত্র পৃথিবীর উপাদান ।। কোন শাখাই সকল শাখাকে নিয়ে আলোচনা করেনি ।। কিন্তু শুধুমাত্র Geography' সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে ।। Geography তে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীব বিজ্ঞান, গণিত , আবহাওয়া বিজ্ঞান, সমুদ্র বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, বনবিজ্ঞান, নদী তত্ত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নগর অঞ্চল পরিকল্পনা, জল বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, মানচিত্রাক্কন বিদ্যা ইত্যাদি সকল বিষয়ই পড়ানো হয়, যা আর কোথাও এক সংগে পড়ানো হয়না ।। তাই Geography পড়লে একই সাথে সামাজিক বিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞান কিংবা Social Science & Natural Science/Physical Science জানা যায় ।।
প্রেক্ষাপট অনুযায়ী Geography এর মিল আছে Physics বা পদার্থ বিজ্ঞানের সাথে ।। ভূগোল প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের নিত্য নতুন শাখার জন্ম দিচ্ছে, যেমনঃ আবহাওয়া বিজ্ঞান, সমুদ্র বিজ্ঞান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান ,নগর অঞ্চল পরিকল্পনা, জল বিজ্ঞান ইত্যাদি ।।
ভূগোল পৃথিবীর সব থেকে পুরনো শাস্ত্রগুলোর একটি ।। গ্রামার না জানলে যেমন ভাষা শেখা যায়না , ঠিক তেমনি ভূগোল না জানলে পৃথিবীকে চেনা যায়না ।। পৃথিবীর অধিবাসী হিসেবে পৃথিবীকে জানা প্রত্যেকটি মানুষের মৌলিক দায়িত্ব ।। তাই প্রত্যেকটি মানুষের ভূগোলের জ্ঞান থাকা অত্ত্যান্ত জরুরী ।। ভূগোল কাজ করে পুরো পৃথিবী নিয়ে ।। এর কাজের সূত্র তিনটিঃ ] স্থান ] কাল এবং ] পাত্র ...
এখানে স্থান , মানে পৃথিবীর কোন স্থান ! কাল মানে পৃথিবীর কোন সময় !! আর পাত্র মানে মানুষ !!! অর্থাৎ সময় // স্থান // মানুষ কে নিয়েই ভূগোলের মূল খেলা ।। এর সাথে থাকে Distance বা দূরত্ব ... ।। দূরত্ব , স্থান কাল পাত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ।।
তাহলে আমরা ভূগোল কিভাবে কাজ করে ? কিসের উপরে কাজ করে ? কেন কাজ করে ? কাজের ফলাফল কি ? এগুলো জানলাম ।।
এখন একাডেমিক ভাবে ভূগোলের কার্যকরণ জানবো, আর ভূগোল পড়লে কি হবে আর না পড়লে কি হবে তা জানবো !! সেই সাথে জানবো ভূগোল গ্র্যাজুয়েট বা ভূগোলবিদদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে !!
সারা পৃথিবীতে ভূগোল যেখানে যেখানে পড়ানো হয় তার মধ্যে সবথেকে সেরা জায়গাটি হলোঃ যুক্তরাজ্যের "অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়/ University of Oxford" সেখানে "স্কুল অব জিওগ্রাফি" সারা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ ।। আর পুরো এশিয়ার মধ্যে জিগ্রাফিতে সবথেকে বেশী এগিয়ে ভারত জাপান ।। ভারতের এমনকোন সরকারী ভার্সিটি নেই যেখানে ভূগোল সাবজেক্ট টি নেই , প্রায় সকল ভারতীয় পাবলিক ভার্সিটিতেই ভূগোল সাবজেক্ট টি রয়েছে ভারতে।। ভূগোলকে ভারত এতো গুরুত্ব দেয় বিধায়, আজ ভারত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সব থেকে এগিয়ে আছে ।।
ভারতের সবথেকে জনপ্রিয় প্রথম সারীর সাবজেক্ট ভূগোল ।। কোলকাতা, মাদ্রাজ, মুম্বাই, দিল্লি জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল সব থেকে এগিয়ে ।। আবার আমেরিকাতেও ভূগোলের জনপ্রিয়তা কম নয় ।। অ্যামেরিকান যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারীর সাবজেক্ট ভূগোল ।। সে দেশে ভূগোলবিদরা নানান গবেষণা ক্রিয়া কর্মে নিয়োজিত ।। নাসা এরকমই একটি সংস্থা, যা মহাকাশ গবেষণা সংক্রান্ত কাজ করে থাকে ।। সংস্থায় বহু ভূগোলবিদ এবং পদার্থবিদ গবেষনায় নিয়োজিত আছেন ।। আমেরিকার নিউইয়র্কে ১৮৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া "The American Geographical Society" "Association of American Geographers/AAG" অ্যামেরিকায় ভূগোলবিদদের পাদস্থান ।।
এরকম সোসাইটি ব্রিটেনেও আছে, যেমনঃ "The Institute of British Geographers " "Royal Geographical Society" .. এরকম সংস্থা আমাদের বাংলাদেশেও আছেঃ
"Bangladesh Geographical Society"
"Bangladesh National Geographical Association" সে যাই হোক...
পৃথিবীর সব সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল পড়ানো হয় ।। কয়েকটি উদাহরণ দেইঃ জার্মানির বার্লিন, বন মিউনিখ, লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় ; ফ্রান্সের সবোর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ।। ব্রিটেনের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ।। অস্ট্রেলিয়ার সিডনী বিশ্ববিদ্যালয়, কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় ।। জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় ।। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ।। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের নামকরা ইউনিভার্সিটিতে ভূগোল পড়ানো হয় ।। সারা পৃথিবীতে যতো ছেলে মেয়ে ভূগোলে পড়াশুনা করে তার অর্ধেকেরই কর্ম গবেষণার চাহিদা রয়েছে অ্যামেরিকায় ।। উন্নত দেশ অ্যামেরিকা, মহাকাশ পৃথিবী নিয়ে গবেষণা করে নিত্য নতুন বিষয় ঘটনাবলীর আবিষ্কার করছে ।। আমেরিকাতে একজন ভূগোলবিদের বেতন আকাশ ছোঁয়া ।। মহাকাশ বিজ্ঞান, জীব বৈচিত্র্য , পরিবেশ, সামরিক ক্ষেত্র সকল দিক থেকে অ্যামেরিকা পৃথিবীতে সবার উপরে রাজত্ব করে এর মুলে তাঁদের ভূগোল শিক্ষা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ভূগোলবিদদের ডেকে নেওয়াই এর মূল কারন ।। মহাসাগর গুলোতে আমিরিকার রণতরী ডুবোজাহাজ ভেসে বেড়ায়, মহাকাশে অ্যামেরিকার স্যাটেলাইট প্রদক্ষিন করে তাঁদের ভূগোল শিক্ষার উৎকর্ষতার কারনেই ।।সামরিক কলা কৌশলেও অ্যামেরিকানরা ভূগোলের জ্ঞান ব্যবহার করে ।। তাই সারা পৃথিবী বিশেষত অ্যামেরিকায় ভূগোলবিদের চাহিদা ব্যাপক ।। আর সারা পৃথিবীর সেরা সেরা ইউনিভার্সিটিতে ভূগোলে পড়াশুনা করার অফুরান সুযোগ রয়েছে ।। রয়েছে পৃথিবীকে প্রাণ ভরে জানার ।। এতক্ষণ আমরা খুব সাধারণ ভাবে জানলামঃ ভূগোল উন্নতদেশ প্রেক্ষিত ;সারা পৃথিবীতে ভূগোলের চাহিদা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ।।

No comments

Theme images by Nikada. Powered by Blogger.